বুধবার ২৬শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

ট্রাম্পের বয়কটেও যৌথ ঘোষণাপত্র গৃহীত, চীনের নজরকাড়া উপস্থিতি

বিশ্ব ডেস্ক   |   মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   2 বার পঠিত

ট্রাম্পের বয়কটেও যৌথ ঘোষণাপত্র গৃহীত, চীনের নজরকাড়া উপস্থিতি

দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে হয়ে গেল বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক জোট জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন। দুইদিন ব্যাপী (২২-২৩ নভেম্বর) এই সম্মেলন বর্জন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপরও নেতারা ‘জোহানেসবার্গ ঘোষণাপত্র’ দিয়েছেন। সম্মেলনে ট্রাম্পের অংশগ্রহণ না করার বড় কারণ দক্ষিণ অফ্রিকা।

আয়োজক দেশটির বিরুদ্ধে ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে শেতাঙ্গদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের অভিযোগ তুলে আসছেন। তিনি যৌথ ঘোষণায় দেশগুলোকে স্বাক্ষর না করারও আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত যৌথ ঘোষণাপত্রটি গৃহীত হয়। ঘোষণাপত্রে জলবায়ু সংকট মোকাবিলা ও বিশ্বব্যাপী বৈষম্যের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের বিষয়ে একমত হন নেতারা। ফিলিস্তিনে শান্তি প্রতিষ্ঠার জোরালো আহ্বান জানান তারা।

ট্রাম্পের বয়কটে ঘোষণাপত্র তৈরি নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। তবে ইউরোপীয় দেশগুলো জানায়, সেটা করলে জোটের ওপর বড় প্রভাব পড়বে। যেভাবেই হোক আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।

জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের এই বয়কটের কারণে হতাশা প্রকাশ করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। তার আশঙ্কা জোটটি ভেঙে পড়তে পারে। তিনি বলেন, ‌‘আমরা এক জটিল ভূরাজনীতির মুহূর্তে বসবাস করছি। যেখানে একসঙ্গে মিলে বড় বড় সংকট সমাধানের কথা, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশকে আমরা পাশে পাচ্ছি না। এটা হতাশার।’

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার মাখোঁর আশঙ্কার সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই, সামনের পথ কঠিন। বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে আমাদের গঠনমূলক ভূমিকা পালনের উপায় খুঁজে বের করতে হবে।’

সম্মেলনে চীনা প্রেসিডেন্টের পরিবর্তে দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং যোগ দেন। তিনি বলেন, একতরফাবাদ ও সুরক্ষাবাদ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। দেশে দেশে সংহতির সংকট নিয়ে চিন্তিত বিশ্ববাসী।

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পরবর্তী নেতৃত্ব হস্তান্তর নিয়ে সংকট
সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জি-২০ জোটের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট পদ হস্তান্তর নিয়ে সংকটে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। শীর্ষ সম্মেলনের শেষে সাধারণ জোটের নেতৃত্বের উত্তরসূরী ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এবারের সম্মেলনে বিপরীত চিত্র দেখা গেছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে পরবর্তী নেতৃত্ব হস্তান্তর করার কথা ছিল। কিন্তু দেশটির সম্মেলন ত্যাগ করায় সভাপত্বি হস্তান্তর নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়।

মার্কিন দূতাবাসের একজন প্রতিনিধির নেতৃত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার একজন জুনিয়র কূটনৈতিক কর্মকর্তার কাছে জোটের প্রেসিডেন্ট পদ হস্তান্তরকে অপমানজনক বলে অভিহিত করে। পরে হস্তান্তর অনুষ্ঠান আর হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার মুখপাত্র ভিনসেন্ট ম্যাগওয়েনিয়া বলেন, এমনটি আগে কখনও ঘটেনি এবং এখানেও ঘটবে না।

সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে রামাফোসা বলেন, জোটের প্রথম সভাপতিত্ব করছি আমরা। কোনোভাবেই এর অমর্যাদা আমরা হতে দেব না।

গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন রামাফোসা। ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের বিরুদ্ধে গণহত্যা হয়েছে। রামাফোসা এই দাবিকে সাহসের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তখনই ট্রাম্প জি-২০ সম্মেলনে অংশ নেবেন না বলে ক্ষোভ দেখিয়েছিলেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোনাল্ড লামোলা বলেন, ‘ট্রাম্পের অনুপস্থিতির ভিত্তিতে বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্মকে পঙ্গু করা যাবে না। এই জোট কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। এখানে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোই সিদ্ধান্ত নেবে।’

২০২৬ সালের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের কথা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। তারা ফ্লোরিডার ডোরালে অবস্থিত ট্রাম্পের গলফ ক্লাবে তাদের শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করবে বলে জানিয়েছে। তবে এবারের জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন যুক্তরাষ্ট্র বয়কট করলেও চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, জাপান এবং কানাডাসহ অন্যান্য অন্যান্য দেশ ঘোষণাপত্রটিকে সমর্থন করেছে।

দরিদ্র দেশগুলোর জন্য এবারের সম্মেলনকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য দূরীকরণে কাজ করা আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা অক্সফ্যামের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘ইতিহাসে এটিই প্রথম সম্মেলন, যেখানে বৈষম্যের শিকার দরিদ্র দেশগুলোর অধিকারকে এজেন্ডার কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।’

১২২ দফা ঘোষণাপত্র গৃহীত, যেসব বিষয়ে একমত বিশ্বনেতারা
জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে ১২২ দফা ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়েছে। এতে জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী আরও বেশি পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে নেতারা একমত হয়েছেন। ব্রাজিলে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন শেষ হওয়ার দিনই নেতারা ঘোষণা করেন, জলবায়ু অর্থায়ন বিশ্বব্যাপী সব উৎস থেকে বাড়ানো প্রয়োজন। বিলিয়ন থেকে বাড়িয়ে ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা প্রয়োজন।

জি-২০ ঘোষণাপত্রে নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে তাদের ঋণ মোকাবিলায় সহায়তা করার জন্য আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলা হয়েছে। নেতারা জাতিসংঘের সনদের ভিত্তিতে ইউক্রেন, সুদান, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো এবং ফিলিস্তিনে ন্যায়সঙ্গত, ব্যাপক এবং স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন। যদিও ৩০ পৃষ্ঠার ঘোষণাপত্রে ইউক্রেনের সংকট মাত্র একবারই উল্লেখ রয়েছে।

রয়টার্স জানায়, ঘোষণাপত্রে নবায়নযোগ্য শক্তি বৃদ্ধির জন্য উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যগুলোর প্রশংসা করা হয়েছে। দরিদ্র দেশগুলোর ভোগান্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

সম্মেলন ঘিরে চীনের উপস্থিতি ছিল নজরকাড়া
শিনহুয়া জানায়, জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন শুরু হওয়ার পর বিমানবন্দর, হোটেল ও শীর্ষ সম্মেলনের ভেন্যুগুলোতে চীনা যানবাহনের আধিপত্য দেখা গেছে, যা ইভেন্টে একটি স্বতন্ত্র মাত্রা যোগ করেছে।

চীনের গাড়ি প্রস্তুতকারী ব্র্যান্ড জেট্যুর, বিএআইসি ও চেরির মতো চীনা গাড়ি নির্মাতারা শীর্ষ সম্মেলনের শাটল বহরের অংশ হিসেবে শতশত যানবাহন সরবরাহ করেছে। এর মধ্যে জেট্যুর ৭০টি ইউনিট অবদান রেখেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা বিভাগের সঙ্গে গত ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে যানবাহনের স্পনসরশিপ চূড়ান্ত করা হয়েছিল।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ আফ্রিকার রাস্তায় চীনা গাড়ি ক্রমশ পরিচিত হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে তরুণ গ্রাহকদের মধ্যে বিওয়াইডি ও জেট্যুর ব্র্যান্ড জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। জেট্যুর ইন্টারন্যাশনালের সভাপতি কে চুয়ানডেং স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, চীনা অটো ব্র্যান্ড পণ্যগুলোতে আস্থা রেখেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। সূত্র: রয়টার্স, ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, জিনহুয়া

Facebook Comments Box

Posted ১০:২৭ এএম | মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।